দুবাইয়ের রেসিডেন্সি ভিসা কি ও এটি পেতে করণীয়
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃহত্তর শহর দুবাই পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ ও ব্যবসা বান্ধব নগরী হিসেবে নিজেকে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এই শহরটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা নিরাপদ জায়গা,ট্যাক্স ফ্রি চাকরি ও ব্যবসায়ের স্বল্প কর সুবিধার কারনে নিয়মিত ভাবেই বিভিন্ন জনপদের মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই শহরটি।যে কারনে সবার জানার আগ্রহে রয়েছে কিভাবে আমরা দুবাইতে থাকতে পারি ঝামেলামুক্ত ভাবে এবং ভালো চাকরি বা ব্যবসা করতে পারি।এই চিন্তাটা বিশেষ করে যারা শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী তাদের বেশি।
আজকে আমরা এই কলামে আলোচনা করবোঃ
#রেসিডেন্সি ভিসা কি?
#দুবাইয়ের রেসিডেন্সি ভিসা কিভাবে নিবেন।
#খরচ কেমন হতে পারে।
#মেয়াদ কেমন হবে।
#মেয়াদ পরবর্তী করণীয়।
#পাসপোর্ট বা সিটিজেনশীপ সুবিধা এবং ডকুমেন্টস কি কি লাগবে।
#রেসিডেন্সি ভিসা কি?
রেসিডেন্সি ভিসার সহজ সংজ্ঞা হলো নিজ দেশের বাহিরে অন্য কোন দেশে বৈধ ভাবে থাকার অনুমতি।অর্থ্যাৎ আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে অন্য কোন দেশে নিয়মিত ভাবে ব্যবসা,চাকরি বা পড়াশোনার জন্য থাকতে চান তাহলে উক্ত দেশের সরকার থেকে আপনাকে উক্ত কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সময় থাকার অনুমতি পত্র প্রদান করা হয়।এই অনুমতি পত্রকে সাধারণত রেসিডেন্সি ভিসা বলে।
যেমন আপনি দুবাইতে চাকরি করতে চান।তাহলে আপনি দুবাই সরকার থেকে দুবাইয়ে নিযুক্ত যেকোনো কোম্পানির অধীনে রেসিডেন্সি ভিসা নিতে পারবেন।এটা হতে পারে নরমাল লেবার রেসিডেন্সি ভিসা,ইমপ্লয়মেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা (হাই প্রফেশন) বা বিজনেস রেসিডেন্সি ভিসা।যা নির্দিষ্ট কাগজপত্র ও ফি প্রদান সাপেক্ষে পেতে পারেন।কিন্তু বিভিন্ন সময় সব ধরণের রেসিডেন্সি ভিসা সকল দেশের মানুষকে আবেদনের সুযোগ নাও দিতে পারে।
#কিভাবে দুবাইয়ের রেসিডেন্সি ভিসা নিবেন?
দুবাইয়ে বিভিন্ন ধরণের রেসিডেন্সি ভিসা রয়েছে।যার মধ্যে অন্যতম হলো লেবার ভিসা,ইমপ্লয়মেন্ট ভিসা (হাই প্রফেশন),বিজনেস (ইনভেস্টর/পার্টনার) ভিসা,গোল্ডেন ভিসা ও ফ্যামিলি ভিসা ইত্যাদি।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ন্যাশনালিটিকে দুবাই বা আমিরাত সরকার এই ধরণের ভিসা সুবিধাগুলো অফার করে থাকে।আবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা সুবিধা ন্যাশনালিটি সাপেক্ষে বন্ধ ও করা হয়।সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দারের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ,মিশর ও ফিলিপাইন এর।আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ন্যাশনালির মানুষদের জন্য নরমাল ক্যাটাগরির লেবার ভিসা বন্ধ রয়েছে।এই ভিসার গ্রাহক একেবারে সাধারণ ক্যাটাগরির মানুষ।যেমন শ্রমিক,ক্লিনার বা এমন ধরণের মানুষ।তাই তারা চাইলেও এই ভিসা নিতে পারবে না।কিন্তু অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসা খোলা রয়েছে।তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ট্যাক্সি ড্রাইভার ভিসা,প্রফেশনাল ইমপ্লয়মেন্ট ভিসা (হাই প্রফেশন),পার্টনার/ইনভেস্টর ভিসা (বিজনেস),গোল্ডেন ভিসা এবং ফ্যামিলি ভিসা ইত্যাদি।
এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নেয়ার জন্য দুবাইয়ে অবস্থিত কোন কোম্পানির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।তারা তাদের কোম্পানির অধীনে আবেদনকারীকে উক্ত ভিসা প্রদান করবে।অনলাইনে ও অনেকে এই ভিসার মার্কেটিং করে থাকে।তাদের থেকে ও বিশ্বস্ততা যাচাই বাচাই করে নেয়া যেতে পারে অথবা পরিচিত কোন ব্যক্তির মাধ্যমে এই ভিসা নেয়া যেতে পারে।যারা বিজনেস/পার্টনার বা ইনভেস্টর রেসিডেন্সি ভিসা নিতে চান তারা প্রথমত দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসার আবেদন করতে হবে এবং নিতে হবে।তারপর উক্তি টুরিস্ট ভিসা নিয়ে নিজের কোম্পানি তৈরি করতে হবে এবং উক্ত কোম্পানির অধীনে বিজনেস/ইনভেস্টর বা পার্টনার ভিসা নিতে হবে।অন্যান্য তথ্য যাদের মাধ্যমে কোম্পানি সেটাপ করবেন বা সেসব এজেন্সি বা ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে জানা যাবে।
#রেসিডেন্সি ভিসার খরচ কেমন হতে পারে?
বিভিন্ন ভিসার ক্যাটাগরির উপর এর খরচ নির্ভর করে।যদি নরমাল লেবার বা সরাসরি কোন কোম্পানি থেকে নিয়োগ করা হয় সেক্ষেত্রে কখনো কখনো ভিসার খরচ কোম্পানি নিজেই বহণ করে,আবার কখনো শুধুমাত্র দুবাই সরকারের নির্ধারিত খরচটি নিয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে শুধুমাত্র দেশ থেকে আসার সরকারী বিভিন্ন খরচ ও বিমান ভাড়া প্রদান করা হতে পারে।কোম্পানির সাথে চুক্তি অনুযায়ী কখনো কখনো বিমান খরচ সহ আনুষঙ্গিক সকল কিছু নিয়োগকারী কোম্পানি বহন করে থাকে।যেসব কোম্পানি চাকরিও দিবে কিন্তু ভিসার জন্য ৩/৪/৫ লক্ষ অথবা আরো বেশি অর্থ দাবি করে সেগুলো সাধারণত ভিসা নিয়েও ব্যবসা করে,কর্মীকে দিয়েও ব্যবসা করে।অনেক ক্ষেত্রে ৩য় পক্ষের কারনে ভিসার খরচ বেড়ে যায়।ফ্রিল্যান্স ভিসার ক্ষেত্রে কোম্পানির ক্যাটাগরি,মালিকানাস্বত্ব ও অন্যান্য চুক্তির উপর নির্ভর করে।এক্ষেত্রে LLC কোম্পানি হলে সাধারণত ৩/৪ লক্ষ টাকা হতে পারে।LLC না হলে ২.৫ থেকে ৩.৫ লক্ষ হতে পারে।
পার্টনার/বিজনেস/ইনভেস্টর ভিসার ক্ষেত্রে শুধু ভিসা খরচ ২.৫/৫ হাজার দিরহাম।তবে এক্ষেত্রে যেহেতু আগে কোম্পানি তৈরী করতে হবে তাই উক্ত খরচটি আলাদা।কোম্পানি তৈরীর খরচ কোন ধরণের কোম্পানি তৈরী করবেন তার ওপর নির্ভর করবে।তবে কোন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলে তারা নিজেরাও কোম্পানি তৈরীর দায়িত্ব নিবে যদি আবেদন কারীর কোন ব্যবসা করার ইচ্ছা না থাকে এবং শুধু ভিসা দরকার হয়।এই ভিসার সকল সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত পরের কলামে আলোচনা করা হবে।
গোল্ডেন রেসিডেন্সি ভিসা করার ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ২ থেকে ৬ হাজার দিরহাম।এই ভিসা পেতে হলে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা এখানে বিনিয়োগ করতে হবে অথবা সম্পত্তি কিনতে হবে। ফ্যামিলি রেসিডেন্সি ভিসা করার ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ২ থেকে ৪ হাজার দিরহাম এর মধ্যে।যিনি ফ্যামিলিকে স্পন্সর করবেন তার ভিসা স্ট্যাটাস,ক্যাটাগরি বেতন ইত্যাদির উপর মূল্য নির্ভর করে।
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৪ থেকে ৭ হাজার দিরহামের মধ্যে।এটি যে প্রতিষ্ঠানে আপনি ভর্তি হবেন সেখান থেকে তথ্য প্রদান করা হয়।
এছাড়া অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রে আমাদের ধারাবাহিক ব্লগে তথ্য প্রদান করা হবে।
উপরিউক্ত ভিসার মেয়াদঃ
লেবার,ইমপ্লমেন্ট,ইনভেস্টর,পার্টনার এসব ভিসার ক্ষেত্রে মেয়াদ ২ বছর।
গোল্ডেন ভিসার ক্ষেত্রে মেয়াদ ১০ বছর।
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কোর্সের মেয়াদের উপর নির্ভর করে।
ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে স্পন্সরের রেসিডেন্সি ভিসার উপর নির্ভর করে।
#মেয়াদ পরবর্তী করণীয়ঃ
সকল রেসিডেন্সি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রিনিউ করার সুযোগ রয়েছে।রিনিউ করার পর ভিসার পূর্ববর্তী সময়ের মতো মেয়াদ পাওয়া যায়।
#দুবাইতে স্থায়ী বসবাসঃ
দুবাইতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ কাউকে দেয়া হয় না। মানে ইউরোপ,আমেরিকা যেমন বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট,নাগরিকত্ব প্রদান করে দুবাই এমন কিছু প্রদান করে না।এখানে এক ভিসায় সর্বোচ্চ ১০ বছর বসবাসের রয়েছে যা পেতে বিশাল পরিমান টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।এছাড়া অন্যান্য ভিসায় ব্যক্তির বয়সের ৬০ বছর পর্যন্ত ভিসা রিনিউ করে এখানে বসবাস করা যাবে।এর পর ভিসা রিনিউ করতে হলে অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হবে।তবে গোল্ডেন রেসিডেন্সি ভিসার ক্ষেত্রে মেয়াদ কোন সমস্যা না।
#প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
২ বছরের সাধারণ লেবার ভিসা পেতে হলে পাসপোর্ট কপি,ছবি এবং প্রসেসিং অনুযায়ী অন্যান্য কাগজপত্র যেমন জব অফার লেটার,কন্টাক্ট লেটার,ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি প্রদান করতে হয়।
এমপ্লয়মেন্ট ও অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কপি,ছবি এবং যোগ্যতার প্রমানপত্রসহ সাবমিট করতে হয়।
ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কপি,ছবি,ম্যারেজ সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
চেষ্টা করেছি কম লেখায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরতে।টাইপিংগত ভূল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি যেহেতু একটি কোম্পানি সেটাপ এজেন্সিতে (ডকুমেন্টস ক্লিয়ারিং সার্ভিস) কাজ করি তাই মূল তথ্যে ভূল থাকার সম্ভাবনা নেই।
দুবাইয়ের যেকোন ভিসা,বিজনেস লাইসেন্স এবং কোম্পানি সেটাপ সংক্রান্ত যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।ইনশাআল্লাহ সঠিক তথ্য দিয়ে হেল্প করা হবে।
আবদুল হাকিম
abdulhakimbd010@gmail.com
+971566229773.