Blog Details

কিরগিজস্তান ভ্রমণ গাইড

সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান পাহাড়ে পর্বতে ভরপুর একটি স্বাধীন মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ট দেশ।এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।এই দেশের চারপাশে ভূমিবেষ্টিত বিভিন্ন দেশ রয়েছে।এর উত্তরে রয়েছে কাজাখস্তান, পশ্চিমে উজবেকিস্তান, দক্ষিণ পশ্চিমে তাজিকিস্তান ও পূর্বে চীন সিমান্ত রয়েছে।

কিরগিজস্তানের রাজধানী শহর বিশকেক

এর জনপ্রিয় বিমানবন্দর মানাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

জেনে রাখা ভালো, আমরা এই আর্টিকেলটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে লিখছি।তাই দুবাইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বেশিরভাগ তথ্য শেয়ার করা হবে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেসিডেন্সি ভিসায় বসবাসকারী বাংলাদেশীসহ যেকোন পেশার মানুষ যাদের ভিসার মেয়াদ অন্তত তিন মাস আছে তারা কিরগিজস্তান ভ্রমন করতে পারবে ভিসা অন এরাইভাল সুবিধা নিয়ে।

আজ আমরা কিরগিজস্তান ভ্রমন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।যা আপনার ভ্রমণকে আরো চমকপ্রদ করে তুলবে।

এই আর্টিকেলে যা যা থাকবে

📜ভিসা সংক্রান্ত তথ্য ও অন্যান্য ডকুমেন্টস

✈️আন্তর্জাতিক যাতায়াত ও খরচ

🕘ভ্রমণের সেরা সময়

🏦হোটেল ও আবাসন সুবিধা

🏞️গুরুত্বপূর্ণ দর্শণীয় স্থান সমূহ

🚗লোকাল যাতায়াত

🍛খাদ্য ও সংস্কৃতি

📢নিরাপত্তা সতর্কতা ও পরামর্শ

✈️যাতায়াত

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ও বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র বিমানে যোগে কিরগিজস্তান ভ্রমণ সুবিধা রয়েছে।সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমৃদ্ধ শহর দুবাই, রাজধানী আবুধাবি বা এর পুরাতন শহর শারজাহ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ফ্লাইট কিরগিজস্তানের উদ্দেশ্যে যারা করে।

দুবাই থেকে যেসব ফ্লাইট নিয়মিত কিরগিজস্তান যাতায়াত করেঃ

🔹এমিরেটস এয়ারলাইনস

🔹ফ্লাই দুবাই

🔹এয়ার মানাস (অনিয়মিত)

আবুধাবি থেকে যেসব বিমান কিরগিজস্তান যাতায়াত করেঃ

🔹উইজ এয়ারলাইনস

🔹পেগাসাস এয়ারলাইন

🔹তুর্কি এয়ারলাইনস

🔹ইতিহাদ ইত্যাদি।

এসব ফ্লাইটের জন্য আগে থেকে চেক করে আপডেট নেয়া যেতে পারে।

এসব বিমান খরচ হতে পারে ৭০০ থেকে ৩০০০ দিরহাম এর মধ্যে।

বাংলাদেশ থেকে কিরগিজস্তানে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই।বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশ ট্রান্সজিট হয়ে কিরগিজস্তান যাতায়াত করতে হয়।

এক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৫০ থেকে ৮০ হাজারের মতো।

🕘ভ্রমণের সেরা সময়ঃ

কিরগিজস্তান সাধারণত শীত প্রধান দেশে যেখানে শীতকালে ব্যাপক স্নো পড়ে।এখানে তাপমাত্রা বছরের বিভিন্ন সময় অনেক বেশি পরিবর্তন ঘটে।

এখানে গ্রীষ্মকাল হতে পারে আদর্শ ভ্রমনের সময় যা জুন থেকে আগষ্ট এর মধ্যে হতে হবে।

এখানে এপ্রিল মে মাসে তুষার গলতে থাকে এবং প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে।

সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে শীত ধারাবাহিক ভাবে শুরু হয় এবং আবহাওয়া শীতল হতে শুরু করে।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এখানে শীতকাল থাকে।যখন ব্যাপক স্নো পড়ে ও বরফে রাস্তাঘাট ভরপুর হয় যায়।অনেক সময় যাতায়াতের রাস্তায় ও চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

তবে, আমাদের দেশের মানুষ যেহেতু দেশ থেকে স্নো দেখার সুযোগ হয়নি তাই এদেশ অনেক সুন্দর অনূভুতির জায়গা দখল করতে পারে।

নোটঃ শীতকালীন ভ্রমণের জন্য অবশ্যই পূর্ণ প্রস্তুতী নিয়ে আসতে হবে মানে শীতের সকল জামাকাপড় সাথে আনতে হবে।প্রয়োজনীয় মেডিসিনও সাথে রাখা উচিৎ।

📜ভিসা সংক্রান্ত তথ্য ও ফিঃ

পূর্বে বলেছি যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেকোন প্রফেশনের রেসিডেন্সি ভিসা হোল্ডার কিরগিজস্তান ভিসা অন এরাইভাল সুবিধা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারে।

এই অন এরাইভাল সুবিধা নিয়ে কিরগিজস্তানের এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর এয়ারপোর্টে ভিসা কাউন্টার আছে।সেখানে ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ ডলার দিয়ে স্টিকার ভিসা নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে কিরগিজস্তানের ই-ভিসা নেয়া যেতে পারে অনলাইনে আবেদন করে।কিরগিজস্তানের কোন সরকারি ভিসা অফিস বাংলাদেশে নেই এবং বাংলাদেশের কোন সরকারি অফিসও কিরগিজস্তানে নেই।

ভিসা ফি মেয়াদের উপর নির্ভর করে।

📜অন্যান্য ডকুমেন্টসঃ

কিরগিজস্তান সহ পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশ ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে,

🔹অর্জিনাল পাসপোর্ট

🔹দুবাই থেকে হলে এমিরেটস আইডি ও ভিসা কপি

🔹যাওয়া আসার বিমান টিকেট

🔹হোটেল বুকিং

🔹ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স

🔹খরচ করার মতো কিছু কারেন্সি সাথে রাখতে হবে।কারেন্সি লোকাল বা ডলারে হওয়া আদর্শ।

🏦হোটেল ও আবাসনঃ

এদেশে শীতপ্রধান হওয়াতে হোটেলগুলো যথেষ্ট পরিকল্পনা মাফিক হয়ে থাকে।মানে রুমের তাপমাত্রা সহ শীত থেকে বাঁচার সকল প্রস্তুতি রাখা হয়।তাই হোটেল খরচ অন্যান্য দেশ থেকে তুলনামূলক বেশি 

কিন্তু ডরমিটরি টাইপের হোটেলগুলোতে খুব কম খরচে থাকা যেতে পারে।

এখানে বিভিন্ন মানের ছোট বড় অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে।এগুলোর অবস্থান বেধে রুম প্রতি ভাড়া হতে পারে ২৫০০ সোম থেকে ২০,০০০ সোম পর্যন্ত।তাই আগে থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে হোটেলের বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা নিয়ে রাখা উচিৎ।

🏞️গুরুত্বপূর্ণ দর্শণীয় স্থানঃ

কিরগিজস্তান প্রাকৃতিক পাহাড়ে পর্বতে ও লেকে ভরপুর সুন্দর একটি দেশ।যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনের গভীরে জায়গা করে নিয়েছে।

🔹আর আর্সা ন্যাশনাল পার্ক (শীতকালে বরফের জন্য বিখ্যাত)

🔹ইসিক কুল লেক (পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম লবনাক্ত লেক)

🔹সোংকুল লেক

🔹বুরানা টাওয়ার

🔹তিয়েন শান পর্বত

🔹কারাকোল স্কি রিসোর্ট

🔹ওশ বাজার (পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বাজার)

🔹সেভেন বুলস (লাল পাথরের পাহাড়)

🔹অরতো টোকয় জলাধার (প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য)

🔹আলা-টু স্কয়ার (বিশকেকের প্রাণকেন্দ্র)

🔹কিরগিজস্তান ঐতিহাসিক জাতীয় যাদুঘর

🔹প্যানফিলোভ পার্ক

🔹ভিক্টরি স্কয়ার

🔹আইল ইউনিভার্সাল স্পোর্টস কমপ্লেক্স ইত্যাদি।

এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর কোন কোনটাতে প্রবেশ মূল্য রয়েছে।তবে তা সাধ্যের মধ্যে।

🚗লোকাল যাতায়াত ও ভাড়াঃ

এদেশে ও অন্যান্য দেশের মতো কমন যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।বাহনগুলোর মধ্যে আছে পাবলিক বাস, মিনিবাস, ট্রেন ও মেট্টো রেল, বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যথা এয়ানডেক্স গো, প্রাইভেট কার ইত্যাদি।

ভাড়াঃ এখানে সাধারণত পাবলিক সার্ভিসে যাতায়াত খরচ ২০ সোম থেকে শুরু হয়।অন্যান্য সার্ভস সহ সকল যাতায়াতে ভাড়া তুলনামূলক যথেষ্ট বেশি।

🔊ভাষা ও মুদ্রাঃ

এদেশের মানুষ নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।ভাষার নাম কিরগিজ।তবে এখানে রাশিয়ার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।কিরগিজের পর এখানে রাশিয়ান ভাষা বেশি ব্যবহৃত হয়।।

ইংরেজি জানা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।সেক্ষেত্রে প্রস্তুতিস্বরুপ ট্রান্সলেটর ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুদ্রাঃ এদেশের মুদ্রার নাম কিরগিজ সোম।দুবাইয়ের ১ দিরহাম দিয়ে এদেশের ২১ সোম পাওয়া যায়।বাংলাদেশি ১.৫ টাকা এখানের ১ সোম পরিমান।

এখানে বিদেশি কর্মীও কাজ করে।তাদের সাধারণত ডলারে বেতন দেওয়া হয়।

🍛খাদ্য ও সংস্কৃতিঃ

কিরগিজস্তানের মানুষ তাদের পুরাতন ঐতিহাসিক খাবার গ্রহণে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।তারা সাধারণত বিভিন্ন পশুর মাংসের সাথে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে খাবার তৈরি করে।বিশেষ করে এখানে ভেড়া ও ঘোড়ার মাংসের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।এছাড়া তারা দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতে বেশি পচন্দ করে।

বাংলাদেশি ট্রাভেলারদের জন্য কিছু ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়।যেখানে খাবার খাওয়া যেতে পারে।এছাড়া রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন আইটেমের আলাদা তরকারি ও রাইস পাওয়া যায়।আলাদা ভাবে দুটার সমন্বয় করে খাওয়া যেতে পারে।একই ভাবে সুপারশপে ও বিভিন্ন আইটেমের খাবারের সংযোগ করে বাংলাদেশিরা খাবার খেতে পারে।

খাবারের দাম তুলনামূলক যথেষ্ট বেশি।ভাতের দামও অতিরিক্ত। তাই দাম জেনে যেকোন খাবার খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

সংস্কৃতিঃ এখানের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রামে বসবাস করে।অর্থনৈতিক ভাবে বেশিরভাগ মানুষ দুর্বল।কৃষিকাজ ও পশুপালন এখানের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস।

তারা নিজস্ব জামাকাপড় ও অন্যান্য সাংস্কৃতিকে ধারণ করে।

📢নিরাপত্তা সতর্কতা ও পরামর্শঃ

এদেশের মানুষগুলো খুব মিশুক ও ভদ্র প্রকৃতির নয়।তাই যতটুকু সম্ভব লোকালদের সাথে দূরত্ব বজায়ে রেখে চলাচল করাই শ্রেয়।

এখানের বৃদ্ধরা সাধারণত বিদেশি নাগরিকদের পছন্দ করে না।কেন করেন না সেটা তারাই ভালে জানে।

তাই সতর্ক অবস্থানে থাকা ভালো।

পরামর্শঃ

🔹নতুন কোন দেশে গেলে সেখানের স্থানীয়দের সাথে কোন প্রকার দ্বন্ধে জড়ানো উচিৎ নয়।

🔹উচ্ছৃঙ্খল কোন কাজকর্মের সাথে জড়ানো অনুচিত।

🔹অনৈতিক ও অসামাজিক সকল কিছু পরিহার করা উচিৎ।

🔹নেশা ও নারী সংক্রান্ত যেকোন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

🔹যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আপনার ভ্রমণটি নিরাপদ, সন্তুষ্টজনক ও শুভকর হোক।

আমাদের প্রতিষ্ঠান Digital Point Tourism নিয়মিত আজারবাইজান সহ বিভিন্ন দেশে ট্যুর প্যাকেজ পরিচালনা করে থাকে।আপনি চাইলে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

লেখকঃ

Abdul Hakim.

abdulhakimbd010@gmail.com

+971566229773.

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *