দু্বাইতে চাকরি পাওয়ার উপায়
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও জনপ্রিয় শহর হচ্ছে দুবাই।যা বর্তমান পৃথিবীর মানুষের ভ্রমণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে।যেকারণে এই শহরে চাকরির ও যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা রয়েছে।বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষগুলোর চাকরি খোঁজার পছন্দের তালিকার দেশগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।এর প্রধানতম কারন হতে পারে এখানে কোন Income Tax নেই।মানে যারা চাকরি করতে এ-শহরে আসেন তাদের আয়ের উপর কোন ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না।তা-ছাড়াও এখানে শান্তি, নিরাপত্তা, জীবন যাপনের মান ও স্বাধীনতা অন্য সব দেশের চেয়েও যথেষ্ট উন্নত ও আধুনিক।তবে বাংলাদেশি চাকরি প্রার্থীদের অবস্থান এখানে যথেষ্ট দুর্বল।
আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে দুবাইতে চাকরি পাওয়া যায় যা বাংলাদেশি চাকরী প্রত্যাশিদের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও উপকার হবে আশা করছি।
এই আর্টিকেলে যা যা থাকবে
◾প্রাথমিক তথ্য
◾যোগ্যতা
◾অন্যান্য যোগ্যতা
◾কাগজপত্র প্রস্তুতকরণ
◾চাকরির আবেদনের মাধ্যম সমূহ
◾চাকরি পাওয়ার উপায়
◾সুযোগ সুবিধা ও বেতন
◾প্রতারণা হতে সাবধানতা
◾উপসংহার
প্রাথমিক তথ্যঃ
দুবাই শহরে চাকরির বাজার যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক।বাংলাদেশিদের জন্য তা আরো বেশি জটিল।এর অন্যতম প্রধান কারন পূর্বে বাংলাদেশ সরকার এদেশে শুধু শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের পাঠাতেন।যে-কারনে এখানের মানুষদের মধ্যে একটি ধারণা এমন তৈরি হয়েছে যে বাংলাদেশি মানুষজন শুধু নির্মাণ শ্রমিক, বাসা বাড়ির হেল্পার, ক্লিনার বা এধরণের কাজ করবে।এজন্য ভালো জায়গাগুলোতে বাংলাদেশি চাকরি প্রার্থীগণ চাকরি পাওয়া যথেষ্ঠ দুরূহ ব্যাপার।তবে অসম্ভব নয়।
যোগ্যতাঃ
দুবাই শহরে চাকরি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।যোগ্যতা ছাড়া কোন ভাবেই ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়।তবে যারা ব্যবসা করবেন সেটা আলাদা বিষয়।
এখানে যাদের যোগ্যতা নেই তারা সাধারণত যে কাজ গুলোতে কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই ওগুলো করে থাকে।তার মধ্যে অন্যতম হতে পারে নির্মাণ শ্রমিক, বাসা বাড়ির ড্রাইভার, কুক, সারভেন্ট, খামারে কাজ করা, হোটেল রেস্টুরেন্ট, অফিসের সহকারী ইত্যাদি।যেখানে সাধারণত বেতন পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ১৫০০ দিরহাম।
কিন্তু যোগ্যতা থাকলে তা বেড়ে কয়েকগুণ হতে পারে।
মৌলিক যোগ্যতা ২ ধরণের হতে পারে।
১. শিক্ষাগত যোগ্যতার ডিগ্রি
২. কোন নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা
🔹শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
সাধারণত যারা কোম্পানির প্রশাসনিক বিভাগগুলোতে কাজ করতে চাই তাদের ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন বা পোষ্ট গ্রাজুয়েশন দাবি করা হয়।যেখানে সরাসরি ডিগ্রি দাবি করা হয় যেখানে অবশ্যই ডিগ্রিধারী ছাড়া আবেদন করার কোন সুযোগ নেই।
এসব পোষ্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, একাউন্ট্যান্ট, সেলস, মার্কেটিং ম্যানেজার, HR, Banking, শিক্ষক, নার্স এবং অন্যান্য আরো অনেক ভালো সেক্টর হতে পারে।
এক্ষেত্রে বেতন হতে পারে শুরুতে ৩ থেকে ৭ হাজার দিরহাম।
অন্যান্য ছোট খাট কাজ কর্মের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রে কম দেখা হয়।তারপরও SSC/ HSC বা সমমান থাকতে পারে।অর্থ্যাৎ লেখাপড়া জানতে হবে যাতে করে অফিস বা কোম্পানির কাজকর্ম গুলো সমাধান করা যায়।
এসব কাজের ক্ষেত্রে বেতন হতে পারে ১২০০ থেকে ৩০০০ মধ্যে।
🔹নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতাঃ
এটা হতে পারে আপনি টেকনিক্যাল বা এধরণের কাজে পারদর্শী।যথা,
গাড়ি সার্ভিসিং, কম্পিউটার সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী ইত্যাদি।
এসব ক্ষেত্রে বেতন হতে পারে ১৫০০ থেকে ৩০০০ দিরহাম পর্যন্ত।
তবে উভর ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন কম বেশি হতে পারে।
অতিরিক্ত যোগ্যতাঃ
অন্যান্য যোগ্যতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ল্যাংগুয়েজ, টেকনোলজির জ্ঞান ও পূর্ব যেকোন কাজের অভিজ্ঞতা।
দুবাই একটি আন্তর্জাতিক শহর।আন্তর্জাতিক যেকোন শহরে কাজ করতে গেলে অবশ্যই সেখানের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ভাষার জ্ঞান অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
দুবাই শহরে কাজ করার জন্য যেসব ভাষা জরুরি সেগুলো হলো ইংরেজি ও হিন্দি।এখানে কম বেশি সবাই ইংরেজি জানে।তাছাড়া মোট জনসংখ্যার ৬০% এর বেশি দক্ষিণ এশিয়ার।যাদের প্রায় সবাই হিন্দি জানে এবং হিন্দিতে কথা বলে।তাই হিন্দির গুরুত্ব এখানে কোন অংশে কম নয়।
এছাড়া যদি সরকারী কোন সংস্থার সাথে কাজ করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আরবি অতীব জরুরি।
কাগজপত্রঃ
দুবাইতে চাকরি করার জন্য যেসব অতি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জরুরি তা নিন্মরুপঃ
🔹পাসপোর্ট (যার মেয়াদ অন্তত ৬ মাস অবশিষ্ট থাকতে হবে)
🔹সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট যা নির্দিষ্ট শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।সম্ভব হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকেও সত্যায়িত করে নিতে হবে।
🔹অভিজ্ঞতা সনদঃ পূর্বে কোন কোম্পানির কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেগুলোর সনদ প্রস্তুত করতে হবে।
🔹যোগ্যতা সনদঃ কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করলে তার সনদ।
🔹এক্সটা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসঃ যদি সামাজিক, ক্রিড়া বা অন্য কোন এক্টিভিটিসের সাথে যুক্ত থাকেন সেগুলোর সনদ।
🔹আন্তর্জাতিক মানের CV ও Cover Letter ইত্যাদি।
চাকরির জন্য আবেদন প্রক্রিয়াঃ
দুবাইতে চাকরি পাওয়ার ২টা প্রধান মাধ্যম হলো দেশে থেকে চাকরির জন্য আবেদন করা অথবা টুরিস্ট বা জব সার্চিং ভিসায় এসে চাকরি খোঁজা বা অলরেডি যদি আপনি দুবাইতে অবস্থান করেন মানে Inside and Out Side.
Inside: যদি আপনি দুবাইতে অবস্থান করে চাকরি খুজেন তাহলে inside’এ আছেন ধরা হয়।
Outside: মানে আপনি দুবাইয়ের বাহিরে আছেন বা বাংলাদেশে আছেন বলে ধরা হয়।
আপনি যেখানেই থাকেন এই দেশে চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।আবেদন করার জন্য প্রধান মাধ্যমগুলোর অন্যতম হলো,
🔹Linked in
🔹Naukrigulf
🔹Indeed
🔹Khaleejtimes
🔹iApply
🔹Dubaijobs
🔹Bayt ইত্যাদি।
এখানের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে Linked in. যদি আপনার linked in ব্যবহারের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে আপনি এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে চাকরি খোঁজার জন্য যোগ্য নই বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে,
🔹বিভিন্ন দুবাই ভিত্তিক কোম্পানির ওয়েবসাইট চেক করা।চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিলে যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করা।
🔹ব্যক্তিগত লিংক বৃদ্ধি করা
🔹বিভিন্ন কোম্পানিতে সরাসরি গিয়ে কথা বলা।
🔹জব ফেয়ার গুলোতে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি।
চাকরি পাওয়ার উপায় সমূহঃ
বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন করার পর আল্লাহর রহমত, ইচ্ছাশক্তি ও চেষ্টা অব্যাহত থাকলে আপনি চাকরি অবশ্যই পাবেন।
কোন চাকরিদাতা আপনাকে সিলেক্ট করার পর ইন্টারভিউ এর জন্য কল করবে।আপনি দেশে থাকলে তো অবশ্যই অনলাইন ইন্টারভিউ হবে আর দুবাইতে থাকলে অফলাইনে সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে হবে।আপনার যোগ্যতা ও অন্যান্য সবকিছু ফুল-ফিল হলে আপনার চাকরি কনফার্ম করে তারা আপনাকে নিয়োগ পত্র বা এপোয়েন্টমেন্ট লেটার দিবে।
বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাঃ
দুবাই সহ আন্তর্জাতিক যে-কোন শহরে চাকরি করতে গেলে চাকরিদাতা কোম্পানি তাদের নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে সেলারি প্রদান করবে।সেলারী কত হতে পারে তা ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে উপরে।
এর সাথে কিছু বাধ্যতামূলক সুবিধা দিতে হবে।যথা,
🔹ভিসা খরচ
🔹বাসা ভাড়া
🔹খাবার খরচ
🔹ডিউটি টাইম ও সপ্তাহিক ছুটি
🔹সরকারি ছুটি
🔹বাৎসরিক ১ মাসের ছুটি ও বেতন
🔹দেশে যাওয়ার রিটার্ন বিমান টিকেট
🔹মেডিকেল সেবা
🔹কোম্পানির খরচে ভিসা প্রদান
🔹বিদায় কালীন পেনশন ইত্যাদি।
উপরের সুযোগ সুবিধাগুলো আমাদের কাছে অনেক জটিল মনে হলেও এটাই হওয়া স্বাভাবিক এবং হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় তাদের একটা চাকরি পেলেই হয় বলে মনে করা হয়।যে কারনে বেতন সহ সকল ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে।তার প্রধাতম কারন হচ্ছে আমরা একটা চাকরি পাওয়াকে নিজেদের জন্য বিশাল অর্জন মনে করি।কিন্তু উন্নত দেশে একজন যোগ্য কর্মী পাওয়াকে কোম্পানি অনেক বড় অর্জন মনে করে।
প্রতারণা হতে সাবধানতা
দুবাই শহরে যেমন যথেষ্ট পরিমাণে চাকরির বাজার রয়েছে একই ভাবে এখানে প্রতারকেরও অভাব নেই।
যেভাবে বুঝবেন আপনি প্রতারিত হতে পারেন তা হলো, যদি কোন প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে টাকা দাবি করে।হতে পারে তারা আপনাকে বেতনের সাথে জামানত ফিরিয়ে দিবে কিন্তু এটা সঠিক নয়।কোন চাকরিদাতা কখনোই আপনার থেকে কোন প্রকার জামানত নিবে না। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক কোন প্রতিষ্ঠান হলে তারা চাকরির বিজ্ঞাপনে জামানতের তথ্য উল্লেখ করে দেয়।সেক্ষেত্রে প্রতারণার সম্ভাবনা কম। এছাড়া অন্য বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়েও যদি টাকা দাবি করে আর তা যদি ১০ দিরহাম ও হয় আপনি দিবেন না এবং আপনার উচিত স্থান ত্যাগ করা।
অনেক সময় হতে পারে বিভিন্ন সাধারণ শ্রেণীর চাকরি বিভিন্ন রেফারেন্সে হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে যিনি রেফারেন্স করবেন তিনি কিছু টাকা দাবি করতে পারে।আপনি বুঝে শুনে রাজি হতে পারেন কিন্তু পেমেন্ট করবেন বেতন পাওয়ার পর।এটা একটি সহজ মাধ্যম হতে পারে।এছাড়া কেউ চাকরির কথা বলে অগ্রীম টাকা দাবি করলে সে ব্যক্তিকে যদি আপনি ভালোভাবে চিনেন এবং কোন সমস্যা হলে পরবর্তীতে টাকা আদায় করতে পারেন তাহলে টাকা দিয়ে চাকরি নিতে পারেন।অথবা হতে পারে অনেকের কাজই হলো বিভিন্ন চাকরির লিংক খুজে বের করা এবং কাউকে টাকার বিনিময়ে চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়া।এগুলো বিশ্বস্ত কোন সুত্র হলে লেনদেন করা যেতে পারে।
তবে, এগুলো কোন অফিসিয়াল আলোচনা নয়।এবং টাকা দিয়ে চাকরি নেয়ার কোন অফিসিয়াল নিয়মও কোথাও নেই।প্রতারিত হলে এই টাকা ফেরত নেয়ার কোন সুযোগ ও থাকে না।তাই লেনদেন করা থেকে সাবধান।
✅উপসংহারঃ
আমরা উপরের আলোচনায় দুবাইতে চাকরি পাওয়ার সকল ধাপ নিয়ে আলোচনা করেছি।এই সম্পর্কে আরো গভীর তথ্য পেতে অনলাইনের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। বাংলা ভাষায় সম্ভবত শুধুমাত্র আমরাই এসংক্রান্ত বিষয়ে লিখি।তাই আপনার ইংরেজি ভাষায় লেখা আর্টিকেলগুলো থেকে অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
যেকোন তথ্য ও পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
Writter,
Abdul Hakim
+971566229773
abdulhakimbd010@gmail.com